বানারীপাড়া প্রতিবেদক ॥ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, কিশোর ও তরুণদের হাতে দামী এ্যানড্রোয়েট মোবাইল সেট দিচ্ছেন খোদ তাদের পরিবারের চালকরাই। কেবল দামী মোবাইল দিয়েই তারা তাদের পরিবারকে সমাজের মধ্যে আপডেট পরিবার হিসেবে জাহির করছেন না। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন দামী সব মোটরবাইক। এছাড়াও তাদের চাহিদামতো পোশাক। পকেট ভরে দিচ্ছেন অর্থে। আর এর ফল দাঁড়াচ্ছে ওই কিশোররাই হচ্ছে নষ্ট।
কোন কোন ক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়’ই চাকরি করছেন ওই সংসারের কিশোর কিংবা তরুণ সন্তানটি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লম্বা একটা সময় পেয়ে যায় ঘরের বাহিরে থাকার। সময়ের ব্যবধানে সে সখ্যতা গড়ে তুলতে পাড়ছে পাড়ার অন্যসব কিশোর বা তরুণদের সঙ্গে। এক সময় আকাশ সংস্কৃতির টিকটক লাইকি ভিগোর গ্রুপে প্রবেশ করে তারা যুক্ত হয়ে পরে কিশোর গ্যাং নামক মারাত্বক ভয়ানক অধ্যায়ে। তার পরের অবস্থা দাঁড়ায় সমাজের মধ্যে প্রচলিত যতগুলো সামাজিক ব্যধি আছে তার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পরা। এরপর থেকে এই কিশোর তরুণরাই সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠে বা থাকে। তাদের সেই নতুন ভাবনায় সমাজের সংস্কৃতি, ভাষা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সবকিছুই তাদের কাছে আলাদা মনে হয়। বিগবস, নাইন এমএম, এলিভেন স্টার, ডিসকো বয়েজ, ডিজে বয়েজ, হেয়ার স্টাইল ও এ্যাপাসি বাইক ইত্যাদি নামে গড়ে তুলছে অদ্ভূত এবং মারাত্মক ‘কিশোর গ্যাং’। ফলে সংঘটিত হচ্ছে নানাবিধ অপরাধ। এই গ্রুপ গুলো এলাকা ভিত্তিক তাদের আধিপত্য বিস্তারের নেপথ্যে মারামারি, ছিনতাই, চুরি, পাড়া বা মহল্লার রাস্তায় মোটরবাইকের ভয়ঙ্কর মহড়া, মাদক সেবন ও বিক্রি, চাদাঁবাজি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে হত্যার মতো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। আবার কোন ক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ার কারণেও কিশোর এবং তরুণদের মানসিক বিকাশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপরদিকে আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং পরকিয়া নামক এক ব্যধি ভয়ঙ্কর ভাবে চেপে বসেছে। যা থেকে উত্তরণের পথ কোন কিছুতেই মিলছে না। এইসব পরিবারের কিশোর ও তরুণরাও হতাশার মধ্যে পরে এক সময় যুক্ত হয় কিশোর গ্যাংয়ের মতো অপরাধ মূলক গ্রুপে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তারকা খ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্কতা, অর্থলোভ, পারিবারিক শিক্ষা ব্যবস্থার ঝুঁকির মধ্যে পরে খেই হারিয়ে ফেলে সমাজের বিভিন্ন গ্যাং কালচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে কিশোর ও তরুণরা।
যেখানে শিশু-কিশোর এবং তরুণদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম ধাপ পরিবার থেকে বাতিয়ে দেয়ার কথা সেখানে আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তাদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্যোশাল মিডিয়া এবং অযাতিত আকাশ সংস্কৃতি। এসব ব্যপারে অভিজ্ঞজন’রা মনে করেণ, আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বা তথ্যপ্রযুক্তি কিশোরদের অপরাধপ্রবনতা বাড়ার বড় একটি সিঁড়ি হয়ে উঠেছে। আর এর জন্য শিশু-কিশোরদের নৈতিক স্খলনও হচ্ছে। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কিশোর ও তরুণদের ব্যবহার করার কারণেও তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টিকটক এবং লাইকিতে বিভিন্ন ধরনের কিশোর গ্যাং’র পদচারণা এবং তাদের কর্মকা- সহজেই দৃশ্যমান হচ্ছে সমাজের মানুষের নিকট। এ থেকে কিছুটা উত্তরণের জন্য কিশোরদের সমাজের ইতিবাচক কাজে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। এর জন্য সমাজ ও দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাখতে হবে। কিশোর ও তরুণদের দিকনির্দেশনার অভাব প্রকট, এ থেকে পরিবর্তন আনতে খেলাধুলা, নাটকসহ খারাব কাজগুলোর পরিণতি জানানো এবং পারিবারিক সচেতনতা গড়তে হবে। কেবলমাত্র পড়াশুনার ওপরে চাপ প্রয়োগ করে সবকিছু ঠিক করা যায় না। তাদের জন্য অবসর সময় কাটানোর জন্য আমাদের সমাজে তেমন ভালো কিছু সৃষ্টি হচ্ছেনা। এ জন্যই তারা অবসর সময়ে আড্ডায় মেতে সিগারেট ও নেশার মতো খারাব কাজের সাথে সম্পর্ক গড়ছে। তবে আমাদের সামাজিক দিকনির্দেশনা ঠিক থাকলে তারা ভালো কিছু করতে পারতো অবসর সময়ে। আগামী প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশ এবং কলুষমুক্ত ও সুস্থ সমাজ গঠনে এখন থেকেই এই বিষয়ে সকলকে বিশেষ করে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর এবং যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে। তাহলেই গ্যাং কালচারের এই বিপথগামী তরুণদের অপরাধমুক্ত রাখা সম্ভবপর হবে এবং আগামী প্রজন্ম রক্ষা পাবে এক অসুস্থ সমাজ থেকে।
Leave a Reply